পঞ্চগড় প্রতিনিধি
ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে এখন পাওয়া যায় নানারকম ডিজিটাল সেবা। মোবাইলেই মিলছে নানান রকম নাগরিক সেবা। সেই সেবা মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে পর্দার আড়ালে কাজ করেন কিছু উদ্যোমী মানুষ। এ রকম এক তরুণ দেশের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা কবির হোসাইন।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড় জেলার তেতাল্লিশটি ইউনিয়ন পরিষদ এবং তিনটি পৌরসভায় প্রথম চালু হয়েছে ডিজিটাল লেনদেন ‘ক্যাশলেস সেবা’। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ডিজিটাল ক্যাশলেস এ সেবা চালু করা হয়েছে। মুঠোফোনসহ যে কোন অনলাইন মাধ্যমে www.uniontax.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকদের এবং www.pouroseba.gov.bd ওয়েবসাইট হতে মিলছে পৌরসভাসমূহ থেকে প্রদানকৃত ২০টিরও অধিক সেবা। যে সেবা পেতে নাগরিকদের দিনের পর যাতায়াত করতে হতো বিভিন্ন অফিসে। অনেক টাকা খরচ ও সময় সাপেক্ষ ছিলো সেবা পেতে। এখন তা পাওয়া যাচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে ঘরে বসে মূহুর্তেই এবং ২৪ ঘন্টাই। অর্থ ও সময় ব্যয় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে না বিভিন্ন অফিসে। হয়রানির হাত থেকে মিলেছে মুক্তি।
নাগরিকদের জন্য তৈরী ডিজিটাল সেবা প্রদান ডিজিটাল সেবা দিতে ওয়েবসাইটটি তৈরীর পেছনের কারিগর হিসেবে কাজ করছেন কবির হোসাইন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং তার সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান সফটওয়েব সিস্টেম সল্যুশন-এর কারিগরি সহায়তায় নির্মিত ডিজিটাল ‘ক্যাশলেস ইউপি ও পৌর সেবা সিস্টেম’ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
‘ক্যাশলেস ইউপি ও পৌর সেবা সিস্টেম’ বাস্তবায়ন ও পরিচালনায় বিশেষ অবদানের জন্য কবির হোসাইনকে বিশেষ সম্মাননায় প্রদান করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ। সোমবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ফেব্রæয়ারি মাসের উপজেলা পরিষদ সভায় সম্মাননা স্মারক তার হাতে তুলে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা। একই সময়ে তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদে ক্যাশলেস ইউপি সেবা বাস্তবায়নের জন্য সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে ইউপি সচিব হারুন অর রশিদকে।
কবির বেড়ে উঠেছেন তেঁতুলিয়ার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম শারিয়ালজোতে। প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ তার ছোট বেলা থেকেই। ২০০৬ সালে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার চালনা শেখেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, অনলাইনে আইসিটি বিভাগের লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রজেক্ট, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে নেন ওয়েব সাইট ডেভেলপমেন্ট ও সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন উদ্যোমী কবির। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে স্নাতকে পড়াকালীন সময়ে উপজেলা পরিষদের স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) হিসেবে চাকুরী পেয়ে যান। এর পাশাপাশি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইভিনিংয়ে মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিট্রেশন (এমবিএ) ডিগ্রী অর্জন করেন।
চাকরীর পাশাপাশি অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এ তরুণ ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসসহ অফলাইনে কাজে করে পরিবারে যোগান দিচ্ছেন বাড়তি আয়ের। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্যাশলেস ইউপি ও পৌরসেবা সিস্টেম তৈরীতে কারিগরি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা প্রদানের কাজ করছে তার “সফটওয়েব সিস্টেম সল্যুশন” নামের এ প্রতিষ্ঠান। এ সকল কাজের মধ্যে রয়েছে, ক্ষুদ্র সেচ যন্ত্র গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান সংক্রান্ত কাজের জন্য ‘ডিজিটাল সেচ সেবা’, রাসায়নিক সার বরাদ্দ, বিক্রয় ও মজুদ সংক্রান্ত বিষয়ে মনিটরিং এর জন্য ‘অনলাইন সার ম্যানেজমেন্ট’ এবং তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দপ্তরের সেবা প্রদান কার্যক্রম সহজীকরণের জন্য ‘সৃষ্টি’ নামক ওয়েব বেইজ এ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে কারিগরি সহায়তা দিয়ে তরুণ এ ফ্রিলান্সার কারগরি উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ সাড়া ফেলেছেন কবির।
ফ্রিলান্সার কবির হোসাইন জানান, উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ কাগুজে নোটের পরিবর্তে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকেন। যা খুব সহজ এবং নিরাপদ। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প গড়ের ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা সমূহে সকল প্রকার সেবা ফি খুব সহজেই এটুআই এর পেমেন্ট প্রসেসর একপের দ্বারা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে পরিশোধ করে নাগরিক সেবা গ্রহণ করা যাচ্ছে। এই উদ্ভাবনী উদ্যোগটি বাস্তবায়নে কারিগরি ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানের জন্য আমাকে সুযোগ প্রদান করায় এবং উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদে পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। নাগরিক সেবা সহজীকরণের মত মহৎ কাজে পেছনের কারিগর হিসেবে ক্ষুদ্র সহযোগিতা করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কাজে যুক্ত হয়ে পিছনের কারিগর হিসেবে সর্বদা কাজ করে যেতে চাই।
You cannot copy content of this page