পঞ্চগড় প্রতিবেদক
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রান্তিক এলাকায় এক সময়ে শিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা পালন করে গণ সাহায্য সংস্থা নামের দেশের অন্যতম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। মাঝে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলায় স্থিমিত হয়ে যায় সংগঠনটির সব ধরণের কার্যক্রম। এই ফাঁকে তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া ডাহুক গুচ্ছগ্রাম এলাকায় সামাজিক বনায়ন করা প্রায় ১০ একর জমি বর্তমানে বেদখল হয়ে আছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠানটির দুর্বলতার সুযোগে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জমিগুলো দখল করে বর্তমানে চা বাগান করেছে বলেও জানান তারা। তাদের দাবি বনায়নের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গণ সংগঠনের সদস্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে। সম্প্রতি এনজিও প্রতিষ্ঠানটি আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তারা। একই সাথে বেদখল হওয়া জমিগুলো উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে তারা। গণ সাহায্য সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জমিটি যারা ভোগদখল করে চা বাগান করেছেন তাদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং জমি দখল ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান।
গণ সংগঠনের সদস্য হাসিনা বেগম বলেন, আমরা শিশু, কাঁঠাল, আমসহ প্রায় ৪০ হাজার গাছের চারা লাগিয়েছি এখানে। কোন মজুরি পাইনি। আশা ছিলো গাছ বিক্রি করে একটা অংশ আমরা পাবো। কিন্তু তার আগেই স্থানীয় কয়েকজন এই জমি দখল করে নেয় এবং আমাদের কষ্টে রোপিত গাছগুলো কেটে ফেলে। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে।
গণ সংগঠনের আরেক সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ডাহুকের পাড়ে এখানে গণ সাহায্য সংস্থা ছাড়া অন্য কারো জমি ছিলো না। এখানে এখনো আমাদের সংগঠনের ঘর রয়েছে। আমরা বনায়ন করেছিলাম। সেটি কেটে ফেলে কয়েকজন দখল করে চা বাগান করেছে। আমরা চাই সংগঠনের জমি দখল মুক্ত করে আবার সংগঠনকে দেয়া হোক।
গণ সাহায্য সংস্থার ম্যানেজার (ল্যান্ড) সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হতদরিদ্র মানুষের সন্তানদের শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করা। শিক্ষার পাশাপাশি ডাহুক বনায়ন নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ১৯৯০ সালে ডাহুক নদীর পাশের পতিত জমি কিনে নেয় আমাদের সংগঠন। পরে সেখানে গণ সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন গাছের হাজার হাজার চারা রোপন করে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আমাদের এই জমিগুলো স্থানীয় অধিবাসী রুবেল, রহুল আমিন হাওলাদার, হানিফ, আবুল কালাম ও কাজী অ্যান্ড কাজী নামের প্রতিষ্ঠান আমাদের জমিগুলো দখল করে চা বাগান করেছে। জমির সব কাগজপত্র আমাদের রয়েছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত খাজনা দেয়া আছে। আমাদের সংগঠনের নামে নামজারিও আছে। তাই আমরা দাবি জানাই যেন আমাদের সংগঠনের জমি সংগঠনকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
গণ সাহায্য সংস্থার ম্যানেজার (এডমিন) মশিউর রহমান বলেন, ডাহুক বনায়ন নামে আমাদের ১০ একরেরও বেশি জায়গা ছিলো। এখানে গণ সংগঠনের সদস্যরা মিলে অনেক গাছ রোপন ও পরিচর্যা করেছে। হতদরিদ্র এই সদস্যরাই এটার অংশীদার। মাঝে আমাদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণে মাঠ থেকে কর্মীরা চলে যায়। গণ সংগঠনের সদস্যদের নির্দেশনা দেয়ার মতো কেউ ছিলো না। এই ফাঁকে আমাদের জমি দখল করে চা লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হলে আমরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু জনবলের অভাবে তাদের সেভাবে প্রতিহত করতে পারি নি। আমাদের সব কাগজপত্র রয়েছে। এটি আমাদের কেনা সম্পত্তি। বর্তমানে স্যাটেলমেন্ট অফিসে শুনানি চলছে। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি।
আশরাফ হোসেন রুবেল ইসলাম বলেন, জমিটি আমরা ১৯৭৮ সালে কিনে নিয়েছি। মোট ১১ একর কেনা জমির মধ্যে আমরা প্রায় ৬ একর জমি বুঝে পেয়েছি। বাকি জমিগুলোর জন্য এখনো বিভিন্ন দাগে আমাদের আপত্তি দেয়া আছে। গণ সাহায্য সংস্থা যে জমির কথা বলছে সেগুলো এই দাগে নেই। তারা যদি কাগজে কলমে প্রমাণ দিতে পারে জমিটি তাদের তাহলে আমরা জমি দিয়ে দিবো। আর তারা যে বনায়নের কথা বলছে তা মিথ্যে।
তেঁতুলিয়া স্যাটেলমেন্ট অফিসের সহকারী স্যাটেলমেন্ট অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা ওই সংগঠনের মৌখিক আবেদনের প্রেক্ষিতে মাঠে এসে জমিগুলো কার দখলে রয়েছে তা দেখে এসেছি। এখন কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবো।
You cannot copy content of this page