পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুকুর পাড় সংলগ্ন পানি নিষ্কাশনের লোহার গেট ভেঙ্গে দেয়া অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দূর্বৃত্তের বিরুদ্ধে। এঘটনায় ওই পুকুর মালিকের প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ার দাবি করে পুকুর পাড় সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে ভূক্তভোগী সহ সকল এলাকাবাসীর ব্যানারে বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের মদনহার এলাকায় মদনহার-কামাতপাড়া সড়কের একপাশে দাড়িয়ে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় ভূক্তভোগী মৎস খামারী রাজীব কুমার বকশী, তার ছোট ভাই রাজেশ কুমার বকশী, স্থানীয় বদিউজ্জামান রনি, আরমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনে স্থানীয় অর্ধশতাধিক মানুষজন অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে ভূক্তভোগী মৎস খামারী রাজীব কুমার বকশী সহ বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে নয় একর জমিতে থাকা পুকুরটিতে মাছ চাষ করে আসছিলেন রাজীব কুমার বকশী। পুকুরের পানি নিষ্কাশনের জন্য পুকুরের পাশ দিয়ে একটি নালাও তৈরী করে দিয়েছেন। এলাকার মানুষের ফসলি জমির পানি যাতায়াতের জন্য একটি নালাও করে দিয়েছেন তিনি। তার পুকুর সংলগ্ন কালভার্টের সামনে তিনি লোহার নেট দিয়েছেন যাতে মাছ পালিয়ে যেতে না পারে। তবে পানি যাতায়াত ছিলো স্বাভাবিক। কিন্তু একদল দুর্বৃত্ত কালভার্টের অপরপ্রান্তে খড় ঢুকিয়ে দিয়ে উজানে পানি বৃদ্ধি করে। গত ৬ জুলাই দুপুরে স্থানীয় কতিপয় দূর্বৃত্ত কারেন্ট জাল, চায়না রিং জাল দিয়ে মাছ ধরার উদ্যেশে হাসুয়া দা, লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে এসে পুকুর সংলগ্ন পানি নিষ্কাশনের লোহার গেট ভেঙ্গে দেন। এতে পুকুরের রুই, কাতল, মিররকার্প, গ্রাস কার্প সহ অন্তত ১৫ প্রজাতির প্রায় ২০০ মন মাছ প্রবল পানির স্রােতে ভেসে যায়। এঘটনায় প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। এর প্রতিবাদ করতে গেলে হুমকি দেয়া হয় তাদের। পরে দূর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করেছেন তারা।
এঘটনায় দোষীদের নাম উল্লেখ করে মৎস খামারী রাজীব কুমার বকশী বোদা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।
রাজীব কুমার বকশী বলেন, চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নির্দেশে পাশর্^বর্তী জোড়পাকুরী এলাকার মিঠুন রায়, হাসান আলী, লুৎফর রহমান, নুরুজ্জামান, সাজু, হাবিবুর, ফরিদুল, তোফাজ্জল, সবুজ, মচু, রবিউল, আনারুল লাঠিশোঠাসহ তাদের লোকজন নিয়ে আমার পুকুর সংলগ্ন কালভার্টের পানি নিষ্কাশনের নেটটি ভেঙে দেয়। এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ বের করে দিয়েছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। চিন্তুায় ঘুমাতে পারছিনা। কোন কারণ ছাড়াই তারা আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে। তারা সবাই কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরে। আমি এর প্রতিবাদ করেছি বলে আক্রাশমূলকভাবে তারা আমার এই ক্ষতি করেছে। আমি থানায় লিখিত অভিযোগও করেছি। আমি চাই তাদের দৃষ্টান্ত শাস্তি হোক এবং আমার এই ক্ষতিপূরণ যেন দেয়া হয়।
তার ভাই রাজেশ কুমার বকশী বলেন, পঞ্চগড় অনেক উঁচু এলাকা। এখানে বন্যা হয় না। অতিবৃষ্টি হলে সাময়িক জলাবন্ধতা দেখা দেয়। তাও দুই তিনদিনেই পানি সরে যায়। যারা মৎস্য খামারের সাথে থাকা পানি নিষ্কাশনের নেটটি ভেঙে ফেলেছে তাদের জমিতে কোন ফসল ছিলো না। কোন ক্ষয়ক্ষতিও হয় নি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা পুকুরের মাছগুলো বের করে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বদিউজ্জামান রনি বলেন, তারা অমানবিক কাজ করেছে। মৎস্য খামারের মালিককে না জানিয়ে এভাবে তার ক্ষতি করা ঠিক করেনি। কোন সুস্থ মানুষ এমন কাজ করতে পারে না।
চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রধান বলেন, উনি কি বলে বলুক। ওই কালভার্টে পানি যাওয়া ধীর গতি থাকায় স্থানীয়দের ক্ষতি হচ্ছিল। তারা গিয়ে ভেঙে দিয়েছে। তবে তার নির্দেশে হয়েছে কিনা এবিষয়ে কিছু জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানাও ওসি অবগত আছেন।
You cannot copy content of this page