পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় মিলন ইসলাম (৫২) নামে জ্বিনের বাদশা চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বোদা থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (৪ জুন) দিবাগত রাতে উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় মিলনের বাসা থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৫০ ইউএস ডলার, ৪৮ সিঙ্গাপুরী ডলার, পিতলের কলস, আলাদিনের চেরাগ জব্দ করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার নয়াটোলা এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলার পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী মহসিন আলী রুবেল (৬৪) প্রতারণামুলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এনে মিলন ইসলাম সহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৫ থেকে ৭ জন অজ্ঞাতানামাদের আসামী করে বোদা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে এই মামলায় মিলনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার (৫ জুন) বিকেলে পঞ্চগড় আদালতে তোলার পরে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত আসামী মিলনকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। গ্রেপ্তার হওয়া মিলন ইসলামের বাড়ি উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের উৎকুড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে।
মামলার এজহার ও বোদা থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মিলন ইসলাম জ্বিনের বাদশা সেজে মানুষের সাথে হনুমানি পয়সা, স্বর্ণের পুতুল (নকল), কষ্টি পাথরের মূর্তি (নকল), তক্ষক সহ সাধারণ মানুষকে বিদেশী ডলার দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পরে চক্রের সদস্যরা অর্জিত অর্থ দিয়ে তারা জমি জমা ক্রয় ও নিজ এলাকায় অট্টালিক নির্মাণ করেন।
এদিকে ৬ষ্ঠ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ২য় দফায় নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মহসিন আলী রুবেল প্রার্থী হন। পরে গত ২১শে মে (মঙ্গলবার) ২য় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন তার হেলিকপ্টার প্রতীকে বিজয়ী করতে ভোটের দিন কেন্দ্রে জ্বিনের বাদশা পাঠিয়ে প্রার্থী রুবেলকে পারবেন বলে প্রলোভন দেখাতে থাকেন জ্বিনের বাদশা চক্রের প্রধান মিলন সহ তার সহযোগীরা। এক পর্যায়ে গত ২৩ এপ্রিল মামলার বাদী মহসিন আলী প্রতারক মিলনের কথা বিশ্বাস করে তার গাড়ির ড্রাইভার বুল ইসলামকে সাথে নিয়ে উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের উৎকুড়া এলাকায় আসেন। পরে প্রতারক মিলনকে তার বাসায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে বাদী মহসিন আলী কয়েকদফায় মোবাইলে বিকাশে সহ বিভিন্ন মাধ্যেমে মোট ১৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। পরে নির্বাচনে ফলাফল গণনা শেষে ৬ষ্ঠ তম হন মহসিন আলী। পরে নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পেরে প্রার্থী মহসিন আলী ২২ মে মিলনের বাসায় এসে টাকা ফেরত চাইলে ঘটনা অস্বীকার করে উল্টো হত্যা ও গুমের হুমকী ধামকী প্রদান করেন মিলন সহ তার সহযোগীরা। পরে উপায়ান্তর না পেয়ে মামলা দায়ের করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মহসিন আলী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বোদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম বলেন, আসামী মিলন প্রতারণার মাধ্যেমে তার সহযোগীদের নিয়ে মানুষের কাছে অর্থ হাতিয়ে নিত। চক্রটির সন্ধান আমরা আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছিলাম। পরে একটি মামলা হলে তার অবস্থান সনাক্ত করে আমরা মিলনকে গ্রেপ্তার করি। পরে বুধবার আদালতে তোলার পরে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছি। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
বোদা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, একটি চক্র বিভিন্ন দিন ধরে সাধারণ মানুষের কাছে হনুমানি পয়সা, আলাদিনের চেরাগ, পিতলের কলসকে সোনার কলস দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছিল। এর আগেও আমরা বিভিন্ন চক্রকে ধরেছি। সম্প্রতি জ্বিনের বাদশা পরিচয় দেয়া একটি চক্রের প্রধান মিলন সহ তার সহযোগীরা নির্বাচনে বিজয়ী করতে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর কাছে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। পরে নির্বাচনে বিজয়ী করতে না পেরে লুকিয়ে থাকেন। পরে তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে হুমকী ধামকি দেন। এ ধরনের চক্র সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
You cannot copy content of this page