পঞ্চগড় প্রতিনিধি
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের হাট-বাজারগুলোতে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার হাট-বাজার গুলোর খুচরা দোকানগুলোতে মিলছে না সয়াবিন তেল। মুনাফা বেশি না হওয়ায় অনেক দোকানদারই তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অল্প কিছু তেলের সরবরাহ রাখলেও তা বিক্রি করছেন শর্ত জুড়ে দিয়ে। শর্ত হলো সয়াবিন তেল কিনতে হলে তার সাথে কিনতে হবে ওই কোম্পানির আটা, হলুদ, সরিষা তেল কিংবা পানির বোতলসহ অন্য পণ্য। আর তা না হলে ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন না বিক্রেতারা। একদিকে তেলের বাজারে উর্ধ্বগতি আর অন্যদিকে তেল কিনতে গিয়ে প্রয়োজন না থাকলেও অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। একদিকে তেলের বাজারে উর্ধ্বগতি আর অন্যদিকে শর্ত জুড়ে তেল বিক্রি করায় ক্রেতারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
একই অবস্থা পঞ্চগড়ের বোদা, আটোয়ারী, তেতুঁলিয়া ও দেবীগঞ্জ উপজেলায়। এসব উপজেলায় শর্ত দিয়ে সয়াবিন বিক্রি না হলেও প্রতি লিটার তেল কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
ক্রেতাদের অভিযোগ একটি অসাধু চক্র সয়াবিনের সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে। বিপাকে ফেলছেন শুধু ক্রেতাদের।
পঞ্চগড় বাজারে তেল কিনতে এসেছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, পঞ্চগড় বাজারের দোকানদারেরা সয়াবিনের সাথে বাড়তি পন্য কিনতে বাধ্যে করছেন। না হলে তেল বিক্রি করছেন না। আমরা সাধারণ ক্রেতারা বিপদে আছি।
বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ স্বামী স্ত্রী দুজনেই এসেছেন বাজারের তেল নিতে। সয়াবিনের বাড়তি দামে তিনি রাগে সরকারের মনিটরিং না থাকা কে দুষছেন। তিনি বলেন, সরকারের লোকজন এই কারসাজির সাথে জড়িত যে কারণে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তারাও একই শর্তে ডিলারদের কাছে সয়াবিন তেল কিনেছেন। খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা হওয়ায় এবং বোতলজাত তেলে মুনাফা কম হওয়ায় অনেকে তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।
এদিকে আগাম টাকা জমা দিয়েও বিভিন্ন কোম্পানির কাছে তেলের সরবরাহ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন ডিলাররা। তেল সরবরাহ করা হলেও তার সাথে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অন্যান্য পণ্যও নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাই তেল বিক্রি করতে শর্ত জুড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারাও।
পঞ্চগড় বাজারের দোকানদার আব্দুর রাজ্জাক বাবুল বলেন, দোকানে তেল নেই। ১ লিটার তেল বিক্রি করলে ২ টাকা লাভ হয়। অনেক পুঁজি আটকে থাকে। আর ডিলারেরা বাড়তি পন্য না কিনলে সয়াবিন সরবরাহ করতে চাননা। আমরাই বা কি করবো।
রমজানের এই সময়ে ভোজ্য তেলের এই সংকট ক্রেতা থেকে ব্যবসায়ী সবার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সংকট আরও বাড়বে। আর এই ফাঁকে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটে নেয়ার সুযোগও তৈরি হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পঞ্চগড় বাজারের তীর সয়াবিন তেলের ডিলার মো নাজিম হোসেন বলেন, তেলে কোম্পানী গুলো আমাদের সয়াবিনের সাথে বাড়তি পন্য নিতে বাধ্যে করছে। কোম্পানীতে অনেক টাকা দেয়া আছে তাও তেল পাচ্ছিনা।
বোদা বাজারের গালামাল ব্যবসায়ী হিরণ, জাফর, রাব্বী ও ফুয়াদ বলেন,আমরা ডিলারদের কাছে অসহায় তারা যে তেলের সাথে কন্ডিশনে তেল দিচ্ছেন। আমরাও ক্রেতাদের হয় দাম বেশি নয় তো অন্যান্য মালামাল দিচ্ছি। এ নিয়ে ক্রেতাদের সাথে আমাদের ঝগড়া বিবাদ হচ্ছে। এছাড়া ১লাখ টাকার তেল চাইলে ২০ হাজার টাকার তেল দিচ্ছেন ডিলারেরা। এছাড়া অতিরিক্ত দামে বিক্রি করলে ভ্রাম্যমানে জরিমানা করা হচ্ছে। আমাদের দু দিক থেকে অসুবিধা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক পরেশ চন্দ্র বর্মন বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। আসলে সমস্যাটা উপর থেকেই। আমি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। উনারা মিটিং করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
You cannot copy content of this page