পঞ্চগড় প্রতিনিধি
জমিসংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষের মামলার শিকার হয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে যখন পুরুষশূণ্য বাড়ি, তখন গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডে ভস্মিভুত হলো ৫ পরিবারের ১৪টি ঘর। এতে সর্বহারা হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের পানিমাছ পুকুরি এলাকার মোজাম্মেল হক সহ তার ৪ ভাইয়ের বাড়িতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ পরিবারের মোট ১৪টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে মারা গেছে বাড়ির হাঁস-মুরগি সহ কয়েকটি ছাগল। এছাড়া ধান, চাল, নগদ অর্থ এবং জমাজমি কাগজপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি ছাই হয়েছে । রেহাই পায়নি ওই বাড়ির স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ৮ জনের বই সহ সার্টিফিকেট গুলোও। আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে এমন দাবি ভুক্তভোগিদের।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ একই এলাকার খাজিম উদ্দীনের ছেলে রশিদুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান এবং রফিকুল ইসলামদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছে তাদের। ক্রয়কৃত সম্পত্তি দখলে রেখে তারা শুরু থেকেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে ভুক্তভোগি পরিবারগুলোকে। মামলা-হামলাও করেছে বিভিন্ন সময়ে। পূর্ব শত্রুতার জেড়ে খাজিম উদ্দীনের ছেলেরাই পরিকল্পিতভাবে বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ তাদের।
মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের সাথে রফিকুল, জিয়াউর সহ তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রায় ১০ একর জমি নিয়ে আমাদের বিরোধ চলছে। শুক্রবারে আমরা জমি দখলে নিয়ে ঘর তুলি। পরে নিয়ে থানা ও আদালতে কয়েকটি মামলাও হয়েছে। গত শনিবার পুলিশ আমাদের বাসার সামনে ক্যাম্প বসিয়ে পাহাড়া দেয়। তারা আমাদের বিভিন্ন আসবাবপত্র উল্টিয়ে রেখে যায়। বাসার নারীরা তাদের কিছু বললে তারা ক্ষেপে ওঠে। পরে তারা আমাদের পরিবারের নারী পুরুষ শিশু সহ ১৪ জনকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। রাতেই রফিকুল, জিয়াউরেরা ৩৮ জনের নামে ও অজ্ঞাত আরো ২০-২৫ জনকে আসামী করে মামলা করে। পরেরদিন পুলিশ আমাদের চালান দিলে আমরা কয়েকজন জামিন নিয়ে বাসায় আসি। কয়েকজন জেলেহাজতে আছেন, এখনো অনেকে পলাতক রয়েছেন। আমরা কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছিনা।
ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্য মনসুরা আক্তার বলেন, জমির দ্বন্দে ঘরবাড়ির সঙ্গে পুরেছে আমার স্বপ্নটাও। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমার অনার্স ২য় বর্ষের মানউন্নয়ন পরীক্ষা হবে। কিভাবে পরীক্ষা দিবো? আমার এডমিট কার্ড তো আগুনে পুড়ে গেছে।
এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, ২০০২-০৩ সাল থেকে জমি নিয়ে তাদের সাথে মামলা চলে আসছে। তারাই আমাদের উপর হামলা করছে, মামলা করছে। আমরা কেন তাদের বাড়িতে আগুন ধরাতে যাবো। এ ধরনের অমানবিক কাজ কখনো কেউ করতে পারেনা।
এদিকে, বুধবার সকালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িটিতে পরিদর্শনে যান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম এবং ইউএনও মাসুদুল হক। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্তদের ৯ বান্ডিল ঢেউটিন, নগদ ২৭ হাজার টাকা অর্থসহায়তা, শীতবস্ত্র হিসেবে ১২ টি কম্বল এবং শুকনো খাবার দেন।
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার তুষার কান্তি রায় বলেন, আমার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি একসাথে অনেকগুলো ঘরে আগুন জ্বলছে। সাধারণত আগুন লাগছে একপাশ থেকে জ্বলার কথা। বিষয়টি আমাদের কাছে সন্দেহের মনে হয়েছে। আমরা দ্রুতই আগুন নেভানোর কাজে লেগে পড়ি। নেভাতে বেশ কয়েকঘন্টা সময় লাগে। কিভাবে আগুন লেগেছে তা তদন্ত করে বের করা হবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। মামলাও হয়েছে কয়েকটি। আমরা কারো পক্ষ নিয়ে কোন কাজ করিনি বা করছিনা। কিভাবে আগুন লেগেছে তা সন্ধানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। আর এ নিয়ে কোন অভিযোগ হলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল হক বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আগুনের সূত্রপাত কিভাবে তা ফায়ার সার্ভিস অনুসন্ধান করে বের করবে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ মৌখিক অভিযোগ করলেও লিখিত অভিযোগ দেননি কারো বিরুদ্ধে। লিখিত অভিযোগ পেলে পুলিশের মাধ্যেমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
You cannot copy content of this page