পঞ্চগড় সংবাদদাতা
পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের কাজলদিঘী মৌজায় পার্শ্ববর্তী বোদা উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন বিশালাকার ঐতিহাসিক ‘কাজলদিঘী’। কাজল কালো রঙের জলরাশিকে আটকে রাখার জন্য চারপাশে রয়েছে সুউচ্চ মাটির ঢিবি। আর ওই উঁচু ঢিবির গাছপালা কেটে সমান করে বাঁশের বেড়া আর টিনের চালা দিয়ে বাড়ি করে চারপুরুষ ধরে বসবাস করে আছেন শতাধিক পরিবার। প্রায় একশ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় পুকুরপাড়ে বাড়ি করে থাকলেও ছিল না কারও জমির মালিকানা। নিজের জমি মনে করে বাস করা এসব মানুষ জানতই না এক সময় ‘কলোনি’তে বাড়ি করা জমি এখন সরকারের খাসজমি। অবৈধ দখলদার হিসেবে থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বাড়ি উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হতো। সমস্যা ছিল কাজলদিঘীটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার মধ্যে অবস্থান হলেও এখানকার অধিবাসীরা পার্শ্ববর্তি বোদা উপজেলার নাগরিক। মুজিববর্ষ উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুকুরপাড়ের খাস জমিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সেমিপাকা ঘর তৈরী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু বাধ সাধেন এখানকার অধিবাসীরা। নিজ ভিটেমাটি থেকে তারা একচুলও নড়বে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাদের নিজ জায়গাতেই তাদেরকে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। সেমত সদর উপজেলা প্রশাসনের কঠোর পরিশ্রমে পুকুরপাড়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ৪৮টি পরিবারের জন্য নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে সুদৃশ্য সেমিপাকা ঘর। পুকুরপাড়ে ‘অবৈধ’ভাবে বসবাস করা লোকজন প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি তাদের নিজ ঘরের স্থানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দিবেন। আজ যখন তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের জমি রেজিষ্ট্রেশনের দলিল, খতিয়ান ও বাড়ির চাবি পেল তখন তাদের চোখে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ। ঈদের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রীর এই উপহারে তাঁর জন্য হৃদয় নিংড়িয়ে দো’আ করছেন কাজলদিঘী পুকুরপাড়ের সকল উপকারভোগীগণ।
কাজলদিঘীর পূর্বপাড়ের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম (৬৫) জানান, পাকিস্তান আমলে কাজলদিঘী পাড়কে ‘কলোনি’ ঘোষণা করার পর মেলা বছর ধরে আমরা এখানে বসবাস করে আসছি। শুরুতেই সংখ্যা অনেক কম হলেও দিন বদলের সাথে এখানে এখন শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। জমিটি নিজের নামে করে নেয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। এতদিন পরে এসে বুঝতে পারছি এই জমি আসলে আমাদের না-এটি সরকারি খাস জমি। এর আগে কয়েকবার উচ্ছেদের চেষ্টাও করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দুই শতক জমির দলিল করে দিয়েছেন। সেই সাথে যে স্থানে ছাপড়া ঘর তৈরী করে আছি সেখানেই আমার ও আমার বড় ছেলে কবিরের জন্য দুইটি সেমিপাকা ঘর করে দেয়া হয়েছে। ঈদের আগেই আমরা পেয়েছি নতুন ঘর। ঈদের ঠিক আগে এত বড় উপহার পেয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল হক জানান, কাজলদিঘী পাড়ের শতাধিক পরিবার কয়েক পুরুষ ধরে এখানে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু তারা যে ঘরে বাস করছিল সেই জমিটি তাদের নয়। এসকল খাসজমি তারা নিজেরা পত্তন নেয়ার কোনদিন চেষ্টাও করেননি। আবার পুকুর ও পুকুরপাড় পঞ্চগড় সদর উপজেলাধীন হলেও এখানকার বাসিন্দারা পাশ্ববর্তি বোদা উপজেলার ভোটার। এসব জটিলতার কারণে আগে তাদের সমস্যার সমাধানও হয়নি। তারা নিজ বাড়ি ছাড়তেও চাচ্ছে না। তাই জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৮টি পরিবারকে আমরা দৃষ্টিনন্দন সেমিপাকা ঘর করে দিয়েছি। আগামি মঙ্গলবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসকল ঘর তাদের মাঝে হস্তান্তর করবেন।
সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এই শ্লোগানে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় কাজলদিঘী পাড়ে ৪৮টি পরিবারের কাঝে হস্তান্তর করা হচ্ছে সেমিপাকা ঘর। ইতোমধ্যে আমরা ঘর নির্মাণের কাজ শেষ করেছি। শেষ পর্যায়ে এখন রঙের কাজ চলছে।
You cannot copy content of this page