পঞ্চগড় প্রতিবেদক
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার বোয়ালমারী এলাকার ভূমিদস্যু ফজর আলী, জাহের আলী সহ তাদের সহযোগীদের হাত থেকে বাচঁতে, নিজেদের বসতভিটা দখলমুক্ত ও হামলার প্রতিবাদে বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করেছে একই এলাকার ভূক্তভোগী এক পরিবার। রবিবার দুপুরে পঞ্চগড় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে পঞ্চগড় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভের পাশে দাড়িয়ে আধাঁ ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে ওই পরিবারটি। মানববন্ধনে ভূক্তভোগীর পরিবার, স্বজন সহ গ্রামবাসীরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে ভূক্তভোগী পরিবারের বড় মেয়ে শামসুন নেহার, তার মা শান্তি বেগম ও তাদের স্বজন রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ ঘটনায় গত ৮ সেপ্টেম্বর ভূক্তভোগী পরিবারের বড় মেয়ে শামসুন নেহার বাদী হয়ে তেতুঁলিয়া মডেল থানায় ফজর আলী সহ ১২ জনের নামে ও অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হলেও কয়েকদিন পরে আগাম জামিন নিয়েছেন মামলার আসামীরা। তবে প্রকাশ্যেই তাদের হুমকী ধামকীতে ভীত পরিবারটি নিজ বাড়িতেই ফিরতে পারছেনা বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করেন বক্তারা।
পরে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা, পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন, জেলা বিশেষ গোয়েন্দা শাখার প্রধান মোকতারুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির আশ্বাস দিলে মানববন্ধন শেষ করে ভূক্তভোগী পরিবার।
মানববন্ধনে হামলার বর্ণণা ও অত্যাচারের কথা বলতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভূক্তভোগী পরিবারের বড় মেয়ে শামসুন নেহার। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার পরিবার নিয়ে উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের কালান্দিগছ এলাকায় বসবাস করতাম। পরে ২০১০ সালে বাবা সহিদুল ইসলাম ও মা শান্তি বেগম তেতুঁলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের বোয়ালমারী এলাকার ফজর আলীর কাছ থেকে ২০ শতক করে দুই নামে ৪০ শতক জমি কেনেন। পরে ওই জমিতে বাড়ি তুলে চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগান তারা। তবে ২০১৬ সালে আমার বাবা ও মায়ের বিচ্ছেদ হলে বাবা তার অংশের ২০ শতক জমি ফজর আলীর কাছে বিক্রি করে অন্যত্র চলে যান। এর পর থেকে ফজর আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা আমাদের বাকী ২০ শতক জমি নিয়ে আমাদের বাড়ির পেছনে ১৫ শতক ও বাড়ির পাশের একটি নিচু ডোবা প্রকৃতির ৫ শতক জমি বদল করে নিতে চাপ দেয়। তবে আমরা তাদের কোন কথাতেই কান না দেয়ায় তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদের উপর অসহনীয় অত্যাচার করতো।
তবে আমাদের আর্থিক প্রয়োজনে বাড়ির উঠানে আমার লাগানো কয়েকটি গাছ বিক্রি করে দেই। গত ৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে গাছগুলো কাটা হচ্ছিল। এসময় ফজর আলী ও তার সহযোগীরা বাশেঁর লাঠি, লোহার রড, বল্লম, কুড়াল সহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমার মা ও নানীর উপর হামলা করে এলাপাথারী মারধর শুরু করেন। এতে আমার মায়ের দুই পা ও নানীর এক পা গুরুতর জখম ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আমি ঘটনার সময় বাড়ি থেকে একটু দূরে ছিলাম। আমার মা সহ নানীকে মারধর করা হচ্ছে শোনামাত্রই ছুঁটে বাড়িতে আসি। এসে দেখি তারা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। পরে আমি ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ ছুটে আসে। পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে প্রথমে তেতুঁলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। তবে কয়েকদিন পরে চিকিৎসক আমার মা ও নানীকে রংপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরিত করলে আমরা আর্থিক সংকটে কয়েকদিন পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চলে আসি। এখন আমরা এক স্থানীয় মানুষের কাছে ৬০ হাজার টাকা ঋণ তুলে নিয়ে কোনমতে আমার মা ও নানীর চিকিৎসা চালাচ্ছি।
তবে ঘটনার অল্প সময়ের মধ্যে তারা বাড়ির বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করে বাড়ির বিভিন্ন মালামাল লুটপাট শুরু করে। আমাদের ঘরে থাকা ৬ মণ মরিচ, ঘরের ট্রাঙ্ক ভেঙ্গে দেড় লাখ টাকা ও আমার মায়ের দেড় ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এছাড়া আমার জাতীয় পরিচয়পত্র ও সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ ও জমির কাগজপত্র তারা নিয়ে গেছে।
আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। পুলিশ কোন আসামী ধরছেনা। আমাদের কোন সহযোগিতা করছেনা। আমি আমার মা ও নানীর উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই। আমাদের লুট হওয়া মালামাল ফেরত চাই। আমরা বাড়িতে ফিরতে চাই। এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসের সহযোগিতা চাই।
তেতুঁলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাইদ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেন। আমরা শামসুন নেহারদের মামলার আসামীকে ধরে আদালতে সোপর্দ করি। বর্তমানে আদালতের মাধ্যেমে দুই পক্ষের সব আসামীই জামিনে মুক্ত হয়। আমরা কাজে কোন অবহেলা করছিনা। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের রায়ে দোষীরা শাস্তি পাবেন আশা করি।
You cannot copy content of this page