বিশেষ প্রতিনিধি
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের হিসেব অনুযায়ী করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়। জেলার তিন দিকেই রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত। এই সীমান্ত দিয়ে করোনার মধ্যেও প্রতিনিয়তই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির চোখকে ফাঁকি দিয়ে জেলায় ঢুকছে ভারতীয় গরু।
জেলায় প্রধান প্রধান পশুর হাট-বাজার গুলো সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় গরুতে প্রতিনিয়তই সয়লাব হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি।
এদিন কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে জেলার প্রধান এবং সবচেয়ে বড় গরুর হাট রাজনগড় গরুর হাট ছিল জমজমাট। দেশি গরুর পাশাপাশি হাটে এদিনও ভারতীয় গরুতে ছিল বাজার সয়লাব। এ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ৯০ শতাংশ মানুষের মুখে মাস্কের ব্যবহার দেখা গেলেও ৮০ শতাংশ মানুষের মাস্ক ছিল থুঁতনিতে। অনেকে আবার কানে ঝুঁলিয়ে রেখেছেন মাস্ক। কেউ মানছেন না কোন স্বাস্থ্যবিধি। করোনার মধ্যেও ভারতীয় গরুতে বাজার সয়লাব হওয়ায় অনেকটা শঙ্কায় রয়েছেন দেশি গো খামারী, ব্যাবসায়ী সহ হাটে আসা ক্রেতা সাধারণ। করোনায় সীমান্ত ফাঁকি দিয়ে কিভাবে বাজারে ভারতীয় গরু আসছে প্রশ্ন তাদের।
জেলার সদর উপজেলার গো-খামারী শহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর কুরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে দেশীয় গরু পালন করেন তিনি। এবারেও তিনটি গরু প্রস্তুত করেছি। শুনলাম ঈদ না আসতেই যেভাবে ভারতীয় গরু বাজারে আসছে তাতে তো আমার মত ছোট খামারীদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে। ধার দেনা করে সামান্য পুঁজি দিয়ে গরু কিনে গরু লালন-পালন করে বাজারে বিক্রি করি। সেই টাকায় কৃষি কাজের খরচ, নিজেদের কাপড়-চোপড় কেনা, সংসারের খরচ, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া সবই চলে। এভাবে লোকসান হতে থাকলে তো আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।
সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের গরু ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস জানান, পঞ্চগড়ের বিভিন্ন হাট লকডাউনে খোলা রয়েছে। সামনে কুরবানীর ঈদ। সেই সাথে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। জেলার পশুর হাট গুলোতে বাড়ছে ভারতীয় গরু। এভাবে চলতে থাকলে তো আমাদের দেশিয় গরু খামারীরা লোকসান গুনবে।
পঞ্চগড় রাজনগড় পশুর হাটের ইজারাদারদের একজন হযরত আলী রাজনগড় পশুর হাটে ভারতীয় গরু ঢোকার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, লকডাউনে আমাদের রাজনগড় গরুর হাট খোলা রয়েছে। তবে আমরা মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পড়া সহ আমাদের লোকজন মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে।
১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল খন্দকার আনিসুর রহমান জানান, সীমান্তে মানুষ পারাপার বন্ধে টহল জোরদার করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টাই আমরা পেট্রোলিং করছি। যাতে কোন মানুষ কিংবা গবাদি পশু কেউ পারাপার করতে না পারে। আমরা সব সময় কঠোর ভাবে সীমান্তে নজরদারি করি। করোনায় আরো বেশি করে আমাদের নজরদারী চলছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, পশুর হাট বন্ধের বিষয়ে কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। তবে পশুর হাটে যদি স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয় বা করোনার ঝুঁকি বেড়ে যায় তাহলে স্থানীয়ভাবে আমরা পশুর হাট বন্ধ করে দিবো। ভারতীয় গরুর ব্যাপারটি আমি আপনাদের মাধ্যেমে জানলাম। এ ব্যাপারে বিজিবিকে আরো কঠোর হতে বলা হবে।
You cannot copy content of this page