মহামারী করোনার মধ্যে চলমান লকডাউনের কঠিন দু:সময়ে সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তিনশত শিশু শিক্ষার্থীদের ঈদের নতুন জামা দিয়ে হাসি ফুটালো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবিয়ান) এর সাবেক শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন। সেই সাথে অসহায় দু:স্থদের স্বাবলম্বী করণের লক্ষে ৫০ জনকে ছাগল ও নগদ অর্থ প্রদান করেছে স্বেচ্ছাসেবী এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি ঈদের ন্যায় এ দিনটির অপেক্ষায় থাকে দেশের উত্তর সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ার কোমলমতি শিক্ষার্থী ও অসহায় হতদরিদ্র মানুষগুলো।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সদর ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামে শিশুস্বর্গ বিদ্যানিকেতনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কোমলমতি শিশুদের ঈদবস্ত্র ও অসহায়-দুস্থদের মাঝে ছাগল ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু। এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান, শিশুস্বর্গ বিদ্যা নিকেতনের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান, শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কবীর আকন্দসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বক্তব্যে বলেন, সীমান্তবর্তী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধা-বঞ্চিত, অসহায়-হতদরিদ্র শিশুদের নিয়ে কাজ করা, তাদের পাঠদানে শিক্ষাবৃত্তি, ঈদ ও শীতবস্ত্রসহ সামাজিক উন্নয়নমুলক কাজে জাবিয়ান কর্তৃক পরিচালিত শিশুস্বর্গের কর্মকান্ড সত্যিই প্রশংসাজনক। স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক এ সংগঠনটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি বাড়াতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
শিশুস্বর্গ পরিচালক কবীর আকন্দ বলেন, আমরা প্রতি ঈদেই শিশুদের নতুন জামা দিয়েই তাদের মুখে হাসি ফুটাতে চেষ্টা করি। আমরা এ বছর ঈদুল ফিতরের শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের সাথে সম্পৃক্ত পরিচালক ও জাবিয়ানদের জাকাতের অর্থে ৫০ জন অসহায়-দুস্থদের স্বাবলম্বী করণের লক্ষে ছাগল ও নগদ অর্থ প্রদান করলাম। আশা করছি সামনে আমরা আরো পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করবো।
দেশের উত্তর সীমান্তবর্তী উপজেলার সীমান্তঘেষা দর্জিপাড়া গ্রামে শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠিা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কবীর আকন্দ। সীমান্তে অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নিয়ে ২০১০ সালে পথ চলা শুরু হয় শিশুস্বর্গের। শুরুতে কবির আকন্দ তাঁর কর্মস্থল হতে প্রাপ্ত বেতনের একভাগ অর্থ দিয়েই চালু করেন শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ বিতরনের কাজ। পরে জাবি’র প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যুক্ত হলে বাড়তে থাকে পরিধি। শীতবস্ত্র, ঈদবস্ত্র, শিক্ষাবৃত্তি, বেকার যুবক, নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করে স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি।
শিশুস্বর্গের শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে। এ গ্রামগুলো থেকে এখন ৪০জন শিক্ষার্থী দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থী রয়েছে ১৭জন। এদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষার পাঠ শেষ করে কর্মস্থল প্রবেশ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় সর্বোত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার শিক্ষার হার এখন সীমান্তবর্তী দর্জিপাড়া গ্রামের। এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে এই শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন।
জাবি’র প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত এ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি সুবিধা-বঞ্চিত, হতদরিদ্র শিশুদের উন্নত ভবিষ্যত গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যে গড়ে তুলেছে শিশুস্বর্গ বিদ্যা নিকেতন ও শিশু আশ্রম। শিশুস্বর্গ বিদ্যা নিকেতনে বর্তমানে প্রথম শ্রেণি হতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে। শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে একটি আধুনিক শিশু হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে জাবি’র প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দ্বারা এ শিশুস্বর্গ প্রতিষ্ঠানটির।
You cannot copy content of this page