নিরব চন্দ্র রায়। বয়স ১১ ছুঁই ছুঁই। ছিলেন স্কুল ছাত্র। করোনার থাবা তাকে ছাত্র থেকে করেছে হোটেল শ্রমিক। পুরো সংসারের ভাড় এখন এই ছোট শিশুটির কাঁধে। রোজগার স্কুলে ছোটা আর ছুটির ঘন্টা তাকে আর টানে না। সে এখন হোটেলের খন্দেরদের ডাকে সাড়া দিতে ব্যস্ত। টানাপোড়েনের সংসারে করোনা যেন যমদূত হিসেবে দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে। ভাগ্যের পতন আর করোনা দুইয়ে মিলে স্কুল ছাত্র নিরব এখন হোটেলের ‘টি বয়’। নিরবেই নিরবের শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে। পড়ালেখা আর খেলাধুলায় মেতে থাকার দুহাত এখন রোজগারের শক্ত হাতে পরিণত হয়েছে। লেখাপড়ার স্বপ্ন এখন তার কাছে মিছে সান্তনা ছাড়া কিছুই নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের পানিয়ালতোলা নতুনপাড়া এলাকায় বাড়ি নিরবের। সংসারে আছে মা নিরদা বালা ও চার বছরের এক ছোট ভাই। বাবা অবিনাশ চন্দ্র রায় চার বছর আগে তাদের সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে পাড়ি জমিয়েছে ভারতে। সেখানে নতুন সংসার পেতেছেন। তারপর থেকেই সংসারে টানাপোড়েন লেগেই রয়েছে। মা নিরদা মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোন মতে দুবেলা ভাত তুলে দিতো দুই সন্তানের মুখে। এভাবেই দুঃখ কষ্টে কেটে যাচ্ছিল তাদের জীবন। খোঁচাবাড়ি প্রাইম কিন্ডার গার্টেনে বিনা বেতনে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো নিরব। করোনার শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যায় নিরবের লেখাপড়ার সুযোগের দুয়ারও। সংসারে নেমে আছে সীমাহীন অভাব। স্বামী পরিত্যক্তা মা একা আর পারছিলেন না। নিরুপায় নিরব লেখাপড়ার আশা ছেড়ে দিয়ে নেমে পড়েন কাজে। বাড়ির পাশের খোঁচাবাড়ি বাজারের একটি হোটেলে টি বয় হিসেবে যোগ দেন। সারাদিন কাজ করে ১৫০ টাকা করে মজুরি পায় এই শিশু শ্রমিক। মা ও ছেলের এই রোজগারেই তিন সদস্যের পেটে ভাত পড়ছে কোন মতে।
ওই এলাকার তরুণ সমাজকর্মী কামরুল হাসান বলেন, নিরবেই নিরবের শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারী তাকে ছাত্র থেকে হোটেল শ্রমিক করেছে। সে লেখাপড়াতে ভাল ছিলো। খুব আগ্রহ ছিলো। ক্লাশে কখনো ফাঁকি দিতো না। ভাগ্য আজ তাকে এই পেশা নিতে বাধ্য করেছে। আর হয়তো তার বিদ্যালয়ে যাওয়া হয়ে উঠবে না। এই করোনায় এমনি অনেক নিরবের স্বপ্ন হারিয়ে গেছে। তাদের জন্য সরকারের কিছু করা উচিত।
You cannot copy content of this page