পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আউটসোর্সিং এর নামে অনুমোদনহীন বিদেশি অ্যাপস নন-ফাঞ্জিবল টোকেন এর (এনএফটি) পঞ্চগড়ে অফিস গড়ে তোলার পর উদ্বোধন করতে গিয়ে অ্যাপটির স্থানীয় প্রতিনিধিসহ ৩ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার ফার্ম গেট এলাকায় নতুন গড়ে ওঠা ওই অফিসে অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করে যৌথবাহিনী।
আটককৃতরা হলেন, নীলফামারীর ডোমার থানার খাটুরিয়া গ্রামের মৃত মনতাজ আলীর ছেলে অ্যাপটির স্থানীয় প্রতিনিধি কাবুল ইসলাম (৩০), গ্রাহক টাঙ্গাইলের সখীপুর থানার মুচারীয়া গ্রামের মৃত সামসুদ্দিনের ছেলে আবু সাঈদ মিয়া (৪৭) ও নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার গোপালপুর পুর্বপাড়া গ্রামের শহিদুল ইমলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৩০)।
অভিযানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে বিভিন্ন উপায়ে আউটসোর্সিং এর নামে এনএফটি’র প্রচারণা চালিয়ে আসছিল কাবুল। দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় কয়েকশতাধীক গ্রাহক তৈরি করে সে। এবং শুক্রবার দুপুরে দেবীগঞ্জ পৌরসভার ফার্ম গেট এলাকায় বাজারে অফিস উদ্বোধন করে কাবুল। অনুমোদনহীন অ্যাপসের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা ঠেকাতে দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী থানা পুলিশকে নিয়ে রাতে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় অফিস থেকে স্থানীয় প্রতিনিধি কাবুল সহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ্দ করে।
পুলিশ জানিয়েছে তাদের থানা হেফায়তে নেয়া হয়েছে।
অভিযানের সময় কথা হয় অ্যাপটির স্থানীয় প্রতিনিধি আটক কাবুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের অপারেশন ডিরেক্টর হচ্ছেন ড্যানিশ ও ইউজিন। উনারা এটাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা যে সিস্টেমে আমাদের আপডেট দিত আমরা সে ভাবে কাজ করি। আমরা পরিবার হয়ে কাজ করতাম। আজকে আপনাদের সামনে সেরাবাহিনীর সামনে এ অবস্থায় থাকতে হবে এটা কল্পনাতেও ছিল না। যদি থাকতো তাহলে আমি এ কাজ করবো কেন, আমি একজন সচেতন নাগরিক। মালশিয়ান মেয়ে ক্যালির মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। তার মাধ্যমে এই প্লাটফ্রমে আশা। তার মাধ্যমে জেনেছি প্রথম বাংলাদেশে এই অ্যাপের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শরিফ নামে একজন। এর বাইরে কারো সাথে কোন পরিচয় বা দেখা নেই বলেও জানায় কাবুল।
অ্যাপটির গ্রাহক আটক আবু সাঈদ মিয়া বলেন, পোল্যান্ডের ফবি নামে এক নারী টেলিগ্রামের বিষয়টি অবগত করে। সেখান থেকে তিনি অফার করেছিলেন। এবং তার মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারি। এর পর গত সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাপের সাখে যুক্ত হই। একই সাথে পরিবারের সদস্যদের যুক্ত করেছি।
আটক আরিফুল ইসলাম বলেন, ২০-২৫ দিন আগে মামা একাউন্ট করে দেন। পরে পরিবার সহ বন্ধুরা এর সাথে যুক্ত হই। এর মাঝে জানতে পারি পঞ্চগড়ে অ্যাপটির অফিস উদ্বোধন হচ্ছে। তাই ১০-১২ জন মিলে দেখতে এসেছি। অ্যাপের কার্যক্রম বৈধ কি না, তা জানি না। সেনাবাহিনী আসলে অন্যরা চলে যেতে সক্ষম হলেও আমরা আটক হই।
অভিযানের বিষয়ে দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইনজামাম বলেন, আমাদের পেট্রোল টিমের সদস্যরা টহল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে ১৫০ থেকে ২০০ জন তরুণ যুবক ফার্ম গেট এলাকায় জমায়েত হয়েছে। তারা একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন অ্যাপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে এসে টাকা-পয়সা লেনদেন করছে। এই লেনদেনটি আমাদের জানামতে বৈধ না। আর ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নয়। আমরা ঘটনাস্থলে আসার পরে এর সত্যতা জানতে পারি। এবং তিনজনকে এর সাথে সরাসরি যুক্ত থাকায় আটক করেছি। আটককৃতদের মধ্যে দেবীগঞ্জে মূল অপারেট আছে।
সে বাংলাদেশের ৬টি অফিসের মধ্যে একটি অফিস পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। একই সাথে আটক করার পর তার ফোন থেকে অনেক কিছু জানা গেছে। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা ডলারে রুপান্তরিত করে বিটকয়েনের মাধ্যমে তারা পোল্যান্ড এবং রাশিয়ার বিভিন্ন স্কেমার এবং হ্যাকার গ্রুপের সাথে যুক্ত থেকে যোগাযোগ করে। এবং আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য একটি অর্থ তারা বিদেশে পাঁচার করছে। আমরা এ ঘটনার সত্যতা জানায় তাদেরকে আটক করে থানা পুলিশে দিয়েছি। দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া পুলিশ গ্রহণ করবে।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা বলেন, আটক তিনজনকে পুলিশি হেফাযতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলামান রয়েছে।
You cannot copy content of this page