পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাহুক নদে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। সরকারি জমিতে এসব পাথর উত্তোলন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী নেতারা। শেখ কামাল সহ ওই নেতাদের বিরুদ্ধে ডাহুক নদের আশে পাশে থাকা ব্যাক্তি মালিকানার জমিতেও জোর করে সন্ত্রাসী কায়দায় পাথর উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। পাথর উত্তোলনের ফলে ডাহুক নদ বিলুপ্ত হওয়ার হুমকিতে পড়েছে। অন্যদিকে এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ।
ভারতে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে ১৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করে করতোয়া নদীর সাথে মিলিতি হয়েছে তেঁতুলিয়ার ডাহুক নদ। প্রবাহমান এই নদের নিচে রয়েছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ পাথর। দীর্ঘকাল থেকে পানির নিচে ডুবে পাথর উত্তোলন করে কর্মসংস্থান করছেন হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। এই নদের উত্তরাংশে হারাদিঘি বালাবাড়ি এলাকায় ডাহুকের খাস জমি এবং নিরীহ মালিকদের জমি জবর দখল করে পাথর উত্তোলন করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কোষাধক্ষ্য এবং বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ কামাল। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনও করেন তিনি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্বেও আওয়ামী সরকারের প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ১৫ বছর ধরে প্রভাব খাটিয়ে পাথর উত্তোলন করলেও শেষের দিকে এই এলাকায় পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর স্থানীয় জমির মালিক ও পাথর ব্যবসায়িরা পাথর উত্তোলন শুরু করলে শেখ কামাল আবারও দখল করে নেয় ওই পাথর কোয়ারী। অভিযোগ উঠেছে শুধু নদীতেই নয় আশে পাশের নিরীহ মানুষের জমি দখল করে পুরোনো কায়দায় আবার পাথর উত্তোলন শুরু করেছেন ওই নেতা । ভূমিহীনদের পত্তনকৃত সম্পত্তিতেও আইন অমান্য করে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার পাথর আরোহন করা হলেও বিশাল অংকের রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে প্রবাহমান ডাহুক নদও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে । স্থানীয়রা বলছেন আওয়ামীলীগ সরকারের সময় প্রতাপশালী এই নেতা একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ডাহুক নদীতে পাথর উত্তোলন করেছেন। শুধু নদীতেই নয় সাধারন নিরীহ মানুষের জমি জোর করে দখল করে পাথর উত্তোলন করেছেন। নদটি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে সময় বদলালেও এখনো তার দাপটে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ । ঘটনার সুস্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি জানিয়েছেন তারা।
লালগজ ও হারাদিঘী গ্রামের আব্দুর রহিম ও আব্দুর রহমান জানান, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে ডাহুক নদের পাড়ে সরকার তাদেরকে প্রায় তিন একর খাস জমি কৃষি আবাদ করার জন্য ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয়। সেই জমিতে তারা কৃষি করতে পারছেন না। আওয়ামী ওই নেতা এই জমিতে জোর করে পাথর উত্তোলন করছে। বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন লাভ হচ্ছেনা। হারাদীঘী গ্রামের খোরশেদ আলম জানান, ১৭ বছর থেকে আমরা কেউ কিছু বলতে পারিনি। এদের তান্ডবে অনেক মানুষ নি:স্ব হয়েছে। বিএনপির কিছু নেতার ছত্র ছায়ায় আবারও তারা তান্ডব শুরু করেছে। আমরা সুস্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিচার চাই। অন্যদিকে ওই এলাকায় ডাহুক নদী সংগলগ্ন জেমকন গ্রুপের কাজী এন্ড কাজী এ্যাস্টেটের জমি দখল করে পাথর উত্তোলনেরও অভিযোগ উঠেছে ওই নেতার বিরুদ্ধে। কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেটের ল্যান্ড অফিসার আবু তাহের জানান বর্তমানে যে জায়গাগুলোতে জোর করে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে ওই জায়গাগুলোর প্রকৃত মালিক জেমকন গ্রুপ । আমরা প্রশাসন কে জানিয়েছি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ কামাল বলেন নিজের জমিতেই পাথর উত্তোলন করছেন তিনি। রহমান ও রহিমের জমি পাথর উত্তোলনের জন্য ডিড করে নেয়া আছে। ডাহুক নদে পাথর উত্তোলন করছেন না তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেছেন ডাহুক নদের ওই এলাকায় সরকারি জমি এবং নদের গতিপথ আটকে পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য আমরা আপাতত মাইকিং সহ নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছি। তারপরেও বন্ধ না করলে আমরা আইন প্রয়োগ করবো।
You cannot copy content of this page