পঞ্চগড় জেলার সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার মানোন্নয়নে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাবনা প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে জাতীয় পরিষদের সদস্য ও জেলা শাখার সভাপতি সাজেদুর রহমান সাজু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সাবেত আলীর কাছে স্মারকলিপি আকারে এই লিখিত প্রস্তাবনা প্রদান করেন। এসময় জেলা গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবনায় জেলা প্রশাসক সাবেত আলীর গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসা করে বলা হয়, জেলা সদর সংলগ্ন এলাকায় ইকো পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন উদ্যোগ আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, বিনোদন সুবিধা এবং পর্যটন সম্ভাবনার জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই রকম জনবান্ধব উদ্যোগ প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ও সম্মান আরও দৃঢ় করেছে। এমন ইতিবাচক ও দূরদর্শী চিন্তার ধারাবাহিকতায় পঞ্চগড় আরও এগিয়ে যাবে। তবে এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যা কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করলে জেলার জনগণের জীবনমান আরও সমৃদ্ধ হবে।
স্মারকলিপি আকারে লিখিত প্রস্তাবনা সমুহ-
১. কর্মসংস্থান ও বেকার সমস্যা নিরসন:
পঞ্চগড় জেলার বহু তরুণ-তরুণী উচ্চশিক্ষা লাভ করার পরও কর্মসংস্থানের অভাবে হতাশায় ভুগছে। এই হতাশা অনেককে অপরাধের পথে ঠেলে দেয়—যেমন: চুরি, ছিনতাই বা মাদক।
তাই শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার জনগণের জন্য দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলা, হস্তশিল্প বা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে কর্মসংস্থান তৈরি জরুরি।
বিশেষ করে, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা পঞ্চগড়ের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান “পঞ্চগড় চিনিকল” পুনরায় চালু করার দাবি জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা।
২. আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, ট্রমা সেন্টার ও হৃদরোগ ইউনিট স্থাপন:
পঞ্চগড় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একেবারে শেষ প্রান্তের জেলা। কোনো সড়ক দুর্ঘটনা বা হৃদরোগের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে রোগীকে প্রায় ১৫০ কিমি দূরের রংপুরে পাঠাতে হয়।
রাস্তাতেই বহু রোগী প্রাণ হারান — প্রায় ৫০% মৃত্যু এই বিলম্বিত চিকিৎসার ফল।
তাই জেলা সদর হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার, হৃদরোগ ইউনিট এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।
৩. শিক্ষার মানোন্নয়ন ও স্কুল মনিটরিং:
পঞ্চগড় জেলার শিক্ষার মান পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে।
জেলা সদরের ২টি সরকারি কলেজ এবং ২টি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার মান, শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠদান, সময়ানুবর্তিতা ও পাঠদানের মান নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ রয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিক্ষার মান অত্যন্ত করুণ।
গুণগত শিক্ষার অভাবে পুরো একটি প্রজন্ম পিছিয়ে পড়ছে — তাই আপনার নেতৃত্বে মনিটরিং ও মানোন্নয়ন জরুরি। প্রতিষ্ঠানের ও শিক্ষকের দায় দায়িত্বের জবাবদিহিতা চালু করা হোক।
৪. কোমলমতি শিশুদের নিরাপদ চলাচলের জন্য উঁচু ফুটপাত:
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। ফুটপাত দখল হয়ে আছে— বাস, ট্রাক, অটোরিকশা, রিকশা, চায়ের দোকান, গ্যারেজ, গ্যাস সিলিন্ডার ও রড দোকানের সরঞ্জাম দ্বারা।
এই অব্যবস্থাপনার কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
– শহর ও স্কুল এলাকার রাস্তা নিরাপদ করতে উঁচু ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হোক এবং পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হোক। ( বিশেষ করে ধাক্কামারা মিলগেট বাজার হতে পঞ্চগড় জজ কোট পর্যন্ত, ধাক্কামারা সিএন্ডবি মোড় হতে পঞ্চগড় জজ কোট পর্যন্ত)
৫. কৃষকদের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ ও কৃষি সহায়তা:
– কৃষকদের উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, জৈব চাষ, সেচব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ এবং সহজে কৃষিঋণের ব্যবস্থা করা হোক। পঞ্চগড় জেলার কৃষকদের সকল সার্টিফিকেট মামলা ( যদি থাকে) বাতিল করতে হবে।
৬. মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ:
– জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার বন্ধে টাস্কফোর্স গঠন, নিয়মিত অভিযান, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু করা হোক। পঞ্চগড় জেলায় মাদক অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য কোঠোর প্রদক্ষেপ নেওয়া হোক।
৭. তরুণদের জন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র:
– উপজেলার প্রতিটিতে আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স, গ্রন্থাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলে তরুণ সমাজকে গঠনমূলক কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।
৮. আইন-শৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তা:
– নারী ও শিশুসহ সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকার আলো, টহল ব্যবস্থা এবং কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম শক্তিশালী করা হোক। পাশাপাশি, স্পর্শকাতর এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হোক।
এতে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এবং অপরাধ দমন সহজ হবে।
৯. দারিদ্র্য নিরসন ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা:
– বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, খাদ্য সহায়তা ইত্যাদি সুবিধা সঠিকভাবে বণ্টন এবং দুর্নীতি রোধে নজরদারি বাড়ানো হোক। এতে গণসংহতি আন্দোলন প্রস্তুত আছে জনস্বার্থে সহযোগিতা করতে।
১০. গণমুখী উন্নয়ন কার্যক্রমে গণসংহতি আন্দোলনের সম্পৃক্ততা:
– জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিগুলোতে গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য জনমুখী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
You cannot copy content of this page