পঞ্চগড় প্রতিনিধি
বসুন্ধরা গুণী সাংবাদিক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক আমির খসরু লাবলুকে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সোমবার (০৬ জুন) দুপুরে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের হলরুমে এই গুণী সাংবাদিককে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ সময় পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি সফিকুল আলম, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, সিনিয়র সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম, সাবিবুর রহমান, সামসুদ্দীন কালাম, সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩০ মে আমির খসরু লাবলুকে তৃণমূল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ প্রদান করা হয়েছে। বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ ও ১ লাখ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়। পড়িয়ে দেয়া হয় উত্তরীয়।
আমির খসরু লাবলু ১৯৬৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ভাসাইনগর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আজিজার রহমান মায়ের নাম খয়রুন নাহার। স্নাতক সম্পন্ন করার পর ১৯৮৯ সালে দিনাজপুরের দৈনিক উত্তরা পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে দৈনিক দিনকাল ও আজকালের খবরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৯১ সাল। টেলিভিশন বলতে মানুষ কেবল বিটিকেই চিনতো। অল্প কিছু মানুষের বাড়িতে ছিলো টেলিভিশন। বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাটারির সাহায্যে সাদাকালো টিভিতে খবর ও ছায়াছবি দেখতো সখের মানুষেরা। রঙিন টিভি ছিলো হাতেগোনা কয়েকজনের। সেই সময়ে বিটিভিতে যোগদান করেন আমির খসরু লাবলু। নিজের কেনা সুজুকি-৮০ মোটরসাইকেল হাকিয়ে ছুটে যেতেন শহর থেকে গ্রামগঞ্জে খবর সংগ্রহে। ছিলো না আধুনিক কোন সুযোগ সুবিধা। সংবাদ পাঠাতে হতো ডাক যোগে। পরে যোগ হয় ফ্যাক্স। ভিএইচএস ক্যাসেটে ভিডিও রেকর্ড করে পাঠিয়ে দিতেন ডাকযোগে। একদিনের খবর প্রচারিত হতো ৩ দিন পরে। অতি গুরুত্বপূর্ণ খবর পাঠাতেন টেলিফোনের মাধ্যমে। টেলিভিশন সাংবাদিকতার কঠিন দিনগুলোর পুরো সময় পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন লাবলু। ৩১ বছর ধরে কাজ করছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে। এখনো তিনি বিটিভির পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। বয়স ৫৭ বছর হলেও এখনো দিব্যি ক্যামেরা নিয়ে ছুটে যান জেলার এক প্রান্ত অন্য প্রান্তে। তুলেন জেলার সম্ভাবনার কথা। মূলত ৯০’র দশকে তার হাত ধরেই মানুষ পঞ্চগড়ের বিভিন্ন ধরণের খবর দেখতে পেতো বিটিভিতে। দীর্ঘদিন বিটিভিতে কাজ করায় স্থানীয়দের কাছে বিটিভি ভাই বলে পরিচিত হয়ে উঠেছেন লাবলু। কঠোর পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অদম্য এই গণমাধ্যমকর্মী।
আমির খসরু লাবলু বলেন, আমি যখন বিটিভিতে কাজ শুরু করি তখন অন্য কোন টেলিভিশন ছিলো না। আমরা অনেক কষ্ট করে খবর সংগ্রহ করতাম। একদিনের খবর প্রচারিত হতো কয়েকদিন পরে। কিন্তু মানুষ যখন পঞ্চগড়ের খবর দেখতো তারা খুব আনন্দিত হতো। সে সময় আমরা কোন এলাকায় গেলে আমাদের ক্যামেরা দেখার জন্য মানুষ ভিড় করতো। মানুষ আমাদের অনেক সম্মান করতো। সাংবাদিকতা করে জীবনে যা পেয়েছি তা হলো মানুষের সম্মান আর ভালোবাসা। তৃণমূল পর্যায়ে অনেক গুণী সাংবাদিক রয়েছেন যারা মেধা, দক্ষতা ও সততার সাথে কাজ করে এলাকায় সমাদৃত হয়েছেন। কিন্তু জাতীয়ভাবে তাদের অবদানের স্বীকৃতি নেই। মূল্যায়ন করা হয় না প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করা সাংবাদিকদের। এমন গুণীজনকে খুঁজে নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ সম্মাননা দেয়ার মাধ্যমে সকল তৃণমূল সাংবাদিকদের সম্মানিত করেছেন। এই সম্মাননা তৃণমূল সাংবাদিকতায় আরও উৎসাহ ও উৎকর্ষ জোগাবে। এই সম্মাননার মাধ্যমে মনে হচ্ছে ৩৩ বছরের সাংবাদিকতা জীবন সার্থক হয়েছে। অন্তরের অন্তস্থল হতে কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা বসুন্ধরা গ্রুপ আর ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া লিমিটেডের জন্য। জীবনের এই স্মৃতি সাংবাদিকতার বাকি জীবনে আমাকে আরও উৎসাহ ও গতি জোগাবে। স্মৃতিময় হয়ে থাকবে আজীবন। সেই সাথে কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা পঞ্চগড় প্রেসক্লাবসহ জেলার সকল গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিও।
You cannot copy content of this page