বিশেষ প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ে বেড়েছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। সেই সাথে বিগত ও বর্তমান বছরের করোনা আক্রান্তের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে হয়েছে নতুন রেকর্ড। যতই দিন যাচ্ছে পঞ্চগড়ে ততই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জেলায় জ¦র-সর্দি কিংবা কাশি নিয়ে কেউ নমুনা দিলেই হচ্ছেন করোনা পজেটিভ। করোনা সংক্রমন রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে অতিতের সব রেকর্ডকে ভেঙে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই বাসা থেকে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে নেই তেমন করোনা রোগীর চাপ। বর্তমানে সেখানে মাত্র ১৭ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাদের শ^াস কষ্ট কিংবা শারিরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে তাদের অধিকাংশই জেলার বাইরে গিয়ে রংপুর কিংবা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেননা পঞ্চগড় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে নেই করোনা রোগীদের জন্য উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা। নেই কোন সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা। সিলিন্ডার অক্সিজেনে নির্ভর করতে হয় এখানকার রোগীদের। ফলে বাইরে করোনার চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিপুল অর্থ গুনতে হচ্ছে রোগীদের। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় সর্বোচ্চ ১৮৮ টি নমুনা পরীক্ষায় একদিনে নতুন করে সর্বোচ্চ ৯৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্তের রেকর্ড করা হয়েছে। যা করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্তের ঘটনা। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৩ জন, তেতুঁলিয়ায় ৯ জন, আটোয়ারীতে ১৯ জন, বোদায় ৮ জন এবং দেবীগঞ্জে ৯ জনের করোনা সনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৫ জন। জেলায় মোট মৃত্যু সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩০ জনে। জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন ৯১৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৫৯৬ জন। চলতি মাসে মোট আক্রান্ত ৪৭৮ জন এবং চলতি বছরে মোট আক্রান্ত ৭৮০ জন। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে এন্টিজেন টেষ্টে ১৬৩টি নমুনায় ৯১ জন এবং দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে ২৫ টি নমুনা পাঠানোর পর ৯ জনের করোনা পজেটিভ আসে। ১৭০ টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৫২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সিভিল সার্জন ডা. মো ফজলুর রহমান রোববার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত জুন মাসের শুরু থেকে পঞ্চগড়ে নমুনা পরীক্ষা এবং করোনা সনাক্তের হার দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে নমুনা পরীক্ষা এবং সনাক্তের হার তেমন ছিল না। এ পর্যন্ত জেলায় ৮ হাজার ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা আইইডিসিআর, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে এবং পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে র্যাপিট এন্টিজেন টেষ্ট পরীক্ষায় ৬ হাজার ৯৯০ জনের ফলাফল এসেছে। সব মিলিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৫ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭০০ জন, তেতুঁলিয়ায় ২০১ জন, আটোয়ারীতে ২০৭ জন, বোদায় ২০৩ জন এবং দেবীগঞ্জে ২৩৪ জন। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছে ৯১৯ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৬১ জন, তেতুঁলিয়ায় ৯৯ জন, আটোয়ারীতে ১৩৫ জন, বোদায় ১৫১ জন এবং দেবীগঞ্জে ১৭৩ জন। এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় মারা গেছে ৩০ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪ জন, তেতুঁলিয়ায় ০২ জন, আটোয়ারীতে ০৪ জন, বোদায় ০৪ জন এবং দেবীগঞ্জে ০৬ জন। পঞ্চগড় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৭ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছে ৫৭৯ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩২৫ জন, তেতুঁলিয়ায় ১০০ জন, আটোয়ারীতে ৬৮ জন, বোদায় ৪৮ জন এবং দেবীগঞ্জে ৫৫ জন।
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. মো ফজলুর রহমান জানান, পঞ্চগড়ের গত ২৪ ঘন্টায় ১৮৮ টি নমুনা পরীক্ষায় একদিনে নতুন করে ৯৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্তের রেকর্ড হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৫৪৫ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে। গত জুন মাসে এবং চলতি মাসে পঞ্চগড়ে নমুনা পরীক্ষা এবং করোনা আক্রান্ত সনাক্ত দুটিই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জেলায় কারো শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি। আমরা নমুনা সংগ্রহ করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাবে পাঠানোর পর সেখান থেকে আবারো নমুনা ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে তারা জানাবে কারো শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে কিনা। তিনি আরো জানান, সর্দি, জ¦র, কাশি বা অন্য কোন উপসর্গ দেখা দিলেই সকলকে করোনা পরীক্ষার জন্য বলা হচ্ছে। এখানে কোন আইসিইউ কিংবা সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই। তবে করোনা চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত জনবল এবং সিলিন্ডার অক্সিজেনের সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। এ পর্যন্ত যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১৭ জন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ও নিজ বাসাতেই হোম আইসোলেশনে আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমরা তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি। কোন সমস্যা হলে তারা আমাদের যেন জানায় এমনটাই বলা হয়েছে। সকলকে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হয়ে নিজ বাসায় অবস্থান করা সহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
You cannot copy content of this page