স্টাফ রিপোর্টার
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ধানখেতের আল থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতকটিকে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে নবজাতকটির মায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মেহেদী হাসান তালুকদার এই আদেশ দেন।
এদিকে ধানখেত থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতকটি বর্তমানে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের নবজাতক বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে (স্ক্যানো ইউনিট) চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেখানে দুই দিন ধরে পুলিশের তদন্তে শনাক্ত হওয়া মা নবজাতকটিকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে।
এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের আওকারী পাড়া এলাকায় একটি ধানখেতের আল থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করেন নাসিমা বেগম (৪৫) নামের এক নারীসহ স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী ও বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী শিশুটিকে উদ্ধার করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই সময় স্থানীয় লোকজন বলেছিলেন, তাঁদের ধারণা, শিশুটিকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই কেউ ধানখেতের আলে ফেলে রেখে গেছে।
এ ঘটনার পর থেকেই বোদা থানার ওসি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তদন্তে নামে। তদন্তে নবজাতকটি স্থানীয় এক কিশোরীর বলে গত শনিবার গভীর রাতে নিশ্চিত হয় পুলিশ। তবে নবজাতকটিকে জন্ম দেওয়া ওই কিশোরী (১৫) ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশ ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা পুলিশকে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে গত রোববার ওই কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা বোদা থানায় মামলা করতে যায়।
এ ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে থানায় ধনেশ (২২) নামের এক তরুণসহ তাঁর মা-বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হুমকির ঘটনায় মামলা করেন।
অভিযুক্ত ধনেশ আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের গোপালজোত এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন, এতে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এমনকি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি ওই কিশোরী নিজের মা-বাবার কাছে গোপন করে ধনেশ ও তাঁর মা-বাবাকে জানান। জানার পরও ধনেশ ও তাঁর মা–বাবা ওই কিশোরীকে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি-ধমকি দেন।
এরপর গত বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে প্রসবব্যথা উঠলে কাউকে কিছু না বলে ওই কিশোরী বাড়ি থেকে কিছু দূরে একটি ধানখেতে গিয়ে একটি মেয়েসন্তান প্রসব করে। এ সময় লোকলজ্জার ভয়ে নবজাতকটিকে সেখানে ফেলে রেখে বাড়িতে চলে আসে ওই কিশোরী। পরে শিশুটির কান্নার শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন নবজাতকটিকে উদ্ধার করে বোদা থানা–পুলিশ ও বোদা উপজেলার ইউএনওকে খবর দেন। খবর পেয়ে তাঁরা নবজাতকটিকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নবজাতকের মায়ের পক্ষের আইনজীবী ওয়াহেজ্জামান সুজা বলেন, ওই নবজাতকের শনাক্ত হওয়া মা শিশুটিকে ফিরে পেতে আদালতে আবেদন করেছে। যেহেতু শিশুটি ইতিমধ্যে তার দুগ্ধ পান করেছে এবং শিশুটির লালন-পালনের কথা বিবেচনা করে আদালত শিশুটিকে ওই মায়ের জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বোদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল কুদ্দুস বলেন, মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে ওই নবজাতকের মায়ের ২২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নবজাতকটিকে তার কাছেই হস্তান্তর করা হবে। সেই সঙ্গে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
You cannot copy content of this page