স্টাফ রিপোর্টার
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় স্বামীর সাথে মোবাইলে ঝগড়া করতে করতে বেবী নামে আড়াই মাস বয়সী কোলের শিশুকে নিয়ে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন লায়লা (২৬) নামে এক গৃহবধূ । শনিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন কমলাপুর (জেমকনের দক্ষিণে) রেললাইন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি ছাড়ার মাত্র তিন মিনিটের মাথায় ঘটনাটি ঘটনায় আকশ্মিক ট্রেনটি থামিয়ে দেন ট্রেনের চালক। তারপরও ট্রেনে ধাক্কা খেয়ে গুরুতর আহত হন ওই গৃহবধূ। এসময় কোলে থাকা শিশু বেবীও রেল লাইনের উপর ছিটকে পড়ে আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আহত শিশু বেবী সহ ওই গৃহবধূকে কমলাপুর রেললাইন থেকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে শিশু বেবী সহ গৃহবধূ লায়লাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. উম্মে হুমায়রা। পরে গৃহবধূ লায়লার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
গৃহবধূ লায়লা জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার এলাকার উমেদ আলীর স্ত্রীর।
কমলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ পারভেজ হিটলার বলেন, অপরিচিত ওই গৃহববধূ অনেকক্ষণ ধরেই রেললাইনের পাশে বসে কার সঙ্গে যেন মোবাইলে ঝগড়াঝাঁটি করছিলেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টা পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার পরপরই তিনি কোলে থাকা শিশুটিকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনটিও দাঁড়িয়ে যায়। পরে আমরা দৌঁড়ে গিয়ে রেলওয়ের লোকজন সহ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। ওই গৃহবধূর সঙ্গে থাকা মোবাইলে কথা বলা সর্বশেষ নম্বরটিতে ফোন করে তাঁর স্বামীর সন্ধান পাওয়া যায়। সম্ভবত তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গেই ঝগড়া করে কোন কারণে অভিমান করে এমনটি করেছিলেন।
পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিচালক আল আমিন খানের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, পঞ্চগড় স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ার তিন মিনিটের মধ্যেই এমন ঘটনাটি ঘটে। পরে চালক দ্রুতই ট্রেনটিকে থামিয়ে ফেলেন। এময় ট্রেনের স্পিড (গতি) কম ছিল এজন্য থামানো সম্ভব হয়েছে। তারপরও ওই নারী ট্রেনের ইঞ্জিন এসে ধাক্কা খান। পরে আমরা স্থানীয় লোকজনকে ডাকলে তাঁরা এসে ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে আমরা ট্রেনটি নিয়ে যাত্রা শুরু করি।
পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনের সহকারি স্টেশন মাস্টার মো. নাজমুল হোসেন জানান, পঞ্চগড় ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার তিন মিনিটের মাথায় দেখি ট্রেনটি থেমে গেছে। ট্রেনের সর্বশেষ ১২ নম্বর কোচটি (ঠ বগি) স্টেশনের কাছে ছিল। পরে আমরা খবর নিয়ে জানতে পারি একজন মহিলা তাঁর শিশুকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়েছেন। ট্রেনের গতি কম থাকায় চালক ট্রেনটি থামাতে পেরেছেন। পরে আমরা জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল করি। এ সময় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বাচ্চা সহ ওই মহিলাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ওই গৃহবধূর সঙ্গে থাকা মোবাইলের মাধ্যমে তাঁর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে তাঁর স্বামী সহ স্বজনেরা পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে আসে। পরে গৃহবধূর স্বামী সহ স্বজনেরা ওই গৃহবধূকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উদ্দ্যেশে যায়। তবে স্বামীর সঙ্গেই ঝগড়া-ঝাঁটি করে অভিমানে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
You cannot copy content of this page