বিশেষ প্রতিনিধি
সরকার আগামী সপ্তাহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টরা প্রস্তুতি শুরু করেছেন। প্রস্তুতির প্রাক্কালে আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টায় অনলাইনে সংগঠনের নিজস্ব পেইজে ইয়ূথ এগেইনষ্ট হাঙ্গারের অন্যতম প্লাটফর্ম বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদের আয়োজনে শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনলাইন টক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনার বিষয় ছিল “ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, যে প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন”। হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের প্রোগ্রাম অফিসার সিজুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন, গনসাক্ষরতা অভিযানের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মোস্তাফিজুর রহমান, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর আনজুমান আখতার, বগুড়া সদরের চকহবিবেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী প্রামাণিক, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সুনিকেতন পাঠশালার প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন, বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী আজমেরী রহমান সিনথীয়া, বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষানবিশ হাবিবা লীনা।
আলোচকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতির প্রাক্কালে বিভিন্ন সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধানের কথা তুলে ধরেন। শিক্ষাবৃত্তি বাড়ানো ,শিক্ষা ঋণ সহজলভ্য করা, শিক্ষা ভাতা টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করা, দেশের সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য ভাতা চালু করা, স্বাস্থ্য বীমার আওতায় সকল নাগরিককে নিয়ে আসা , পুষ্টিকর মিড ডে মিল চালু করা, প্রাথমিকে অতিরিক্ত মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ করা,অটিজম শিশুদের প্রতি নজর দেয়া, সম্ভব হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না হলে কয়েকটি স্কুল মিলে একজন করে শিশু মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেয়া যাতে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া যায়, অনলাইন ক্লাসকে ফলপ্রসু করতে কি কি কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন সে বিষয়ে কৌশল করা, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে অনেক বেশি জনসচেতনতা প্রয়োজন কেননা যেসব শিশু শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে তারা দিনে ৫০০ টাকা আয় করে আর আমরা ছয়মাসে হয়ত ১০০০ টাকা দেই সেক্ষেত্রে অস্বচ্ছল ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সন্তানদের শিশুদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহ দেখাবেনা তাদের ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করতে হবে। বাল্যবিবাহ একটি মারাতœক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে কেননা ছেলে শিক্ষার্থীরা মাঠে কাজ করলেও মেয়েরা বাড়িতে বসে থাকলেই তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ে দেয়ার ভূত চাপছে। যাদের বিয়ে হয়নি তাদের যেন বাল্যবিবাহের স্বীকার না হতে হয় সে ব্যাপারে তৎপর হতে হবে। অবকাঠামোগত প্রস্তুতি রয়েছে কিন্তু পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার প্রতি জোর দিতে হবে। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের একইরকম পোশাক করা হলে তারা বাইরে ঘোরাফেরা করলে পুলিশ কিংবা একজন সচেতন নাগরিক তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকিয়ে দিতে পারবে। আলোচকরা বলেন, প্রাথমিক স্কুলের চেয়ে মাধ্যমিক স্কুলের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার। যতদ্রুত সম্ভব অন্তত ৮০ ভাগ শিক্ষকদের টিকার আওতায় আনতে হবে। পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করা জরুরী এবং এখনই নির্দেশনা দেয়া উচিত যাদের পরীক্ষা হবেনা তাদের কিভাবে পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে কেননা এখনও পুরোপুরিভাবে আমরা স্কুল খুলতে পারছি না। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পড়া নিশ্চিত করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে মার্চে আরেকটা ঢেউ আসতে পারে সেটি হলে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। সেক্ষেত্রে যদি আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় অনলাইন ক্লাস কিভাবে নেয়া হবে অধিকাংশ অভিভাবক কাজের জন্য বাইরে থাকায় গ্রামের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ গ্রামের অভিভাবকদের স্মার্টফোন আছে ক্লাস করতে গেলে ৫ জনকে পাওয়া যায়। এমন সমস্যা সমাধানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেয়া কিংবা দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়া দরকার। প্রায় দশ হাজার কেজি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর ভাগ্য অনিশ্চিত সেক্ষেত্রে তাদের কিভাবে অতিদ্রুত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি করানো যায় সে ব্যাপারে আমাদের পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। আলোচকরা বলেন, শিক্ষকের পেশা পরিবর্তন হলেও শিক্ষার্থীর পেশা তো পরিবর্তন হয়নি। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের প্রাথমিকে নিয়োগ দেয়া যদিও স্বপ্নের ব্যাপার তবুও চিন্তা করা শুরু করতে হবে মানসম্মত দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হলে। জিডিপির অন্তত ৩ শতাংশ শিক্ষাতে বরাদ্দ করতে হবে বলে দাবি তোলেন আলোচকরা।
অনুষ্ঠানটি ইয়ূথ এগেইনষ্ট হাঙ্গারের ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
You cannot copy content of this page