বিশেষ প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার আব্দুল জলিল। পেশায় একজন ব্যাটারী চালিত ভ্যান চালক। অভাবের সংসারে স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে কোন মতেই পার করতেন দিন। প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হতো তাই দিয়ে দিনাতিপাত করতেন তিনি। প্রতিদিনের মত বুধবার সকালেও ভ্যান নিয়ে জীবিকার তাগিদে বাইরে বেরিয়ে পড়েন তিনি। বাসায় ফেরার সময় সন্তানের জন্য নিয়ে আসতেন নানা রকমের খাবার। বুধবার লকডাউনের কারণে তেমন ভাড়া হওয়ায় বিকেলের মধ্যেই বাসায় ফিরেন তিনি। পরে ভ্যানটি চার্জে তার লাগিয়ে দিয়ে বাড়ির পাশের এক দোকানে যান চা খেতে। প্রতিদিন ভ্যানটি চার্জে দিয়ে বৃষ্টি থেকে ভ্যানকে নিরাপদ রাখার জন্য প্লাটিক মুড়িয়ে দিলেও এদিন তা না করেই বাইরে চলে যান তিনি। এদিকে জলিলের স্ত্রী ইয়াসমিন বেগমও বাসায় করছিলেন রান্না-বান্নার কাজ। এরই মাঝে সন্ধ্যার সময় খেলার ছলে তাদের ৩ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান ইমরান বাবার চার্জে দেয়া ভ্যানের চার্জারে গিয়ে হাত দেয়। পরে ভ্যানের চার্জারে ইমরানের ডান হাত লাগা মাত্রই মা বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে সে। এসময় তার ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলটি ঝলসে যায়। মা ইয়াসমিন বেগম ছেলে চিৎকারে বাইরে বেরিয়ে দেখেন তার বুকের মানিক ভ্যানে বিদ্যুতায়িত হয়েছে। পরে ইমরানকে তার মা শুকনো বাঁশের সাহায্যে বিদ্যুৎ থেকে বিছিন্ন করে। এরই মধ্যে ইমরান অজ্ঞান হয়ে পড়লে প্রতিবেশিদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমরানকে মৃত ঘোষনা করে। পরে শিশু ইমরানের মরদেহ বাসায় এনে রাতেই দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।
বুধবার (০৭ জুলাই) সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের রামগঞ্জ বিলাসী কামাত পাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আহাজারিতে ভেঙে পড়ছেন জলিল-ইয়াসমিন দম্পতি। প্রতিবেশি আর স্বজনেরা যেন নিজেদের সামলাতে পারছেন না। ইমরানকে হারানোর শোকে তারাও ভেঙে পড়ছেন কান্নায়। পুরো গ্রাম জুড়ে চলছে এখন শোকের মাতম। কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছেনা জলিল-ইয়াসমিন দম্পতিকে। কে ডাকবে বাবা-মা বলে আর কেইবা বলবে খাবার আনতে। এ কথাই বারবার বলে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা ইয়াসমিন।
প্রতিবেশি আব্দুল আলিম জানান, প্রতিদিনের মত ব্যাটারী চালিত ভ্যানটি চার্জে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন জলিল। এরই মাঝে খেলার ছলে ভ্যানের চার্জারে গিয়ে তার দেয় শিশু ইমরান। পরে সে সেখানেই চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জামাল হোসেন জানান, আসলেই এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পরে নিহতের সুরৎহাল করেছি। এ ঘটনায় দেবীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করা হয়েছে।
You cannot copy content of this page