বিশেষ প্রতিনিধি
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে কঠোর লকডাউন। এ কারণে দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন পথ-ঘাটে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। এমন কঠোর অবস্থার মধ্যেই পুলিশের চেকপোস্ট পেরিয়ে সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে প্রশাসনের কাউকে না জানিয়ে পশুর হাট চালু করার অভিযোগ উঠেছে পঞ্চগড়ের রাজনগর পশুর হাটের ইজারাদার মোশারফ হোসেন সহ সহযোগী ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক পশুর হাট হওয়ায় পশুর হাট বসবে এমন খবরে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু বিক্রেতারা তাদের কুরবানীর জন্য তৈরী করা পশু নিয়ে হাজির হন হাটে। এদিন সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত প্রায় ৪ ঘন্টা হাট চলার পর পশুর হাট চালু হয়েছে এমন খবরে হাটে গিয়ে উপস্থিত হন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু আক্কাস আহমেদ সহ পুলিশ-বিজিবির সদস্যরা।
পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরে বন্ধ হয় হাটের বেচাকেনা। মাইকিং করে পশু নিয়ে চলে যেতে বলা হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের। হাট থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সব ধরনের লোকজনকে। পরে হাট ইজারাদার মোশাররফ হোসেনকে ১ লাখ ও তার দুই সহযোগী রিপন ও নবীনকে ৫০ হাজার করে ১ লাখ সহ মোট ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে কঠোর লকডাউন আর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট থাকা সত্যেও কিভাবে ইজারাদার হাটের কার্যক্রম চালু করলেন তা নিয়ে জেলার সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। একই সাথে তারা সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও তুলেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চগড় রাজনগর পশুরহাটের পুরো স্থান গরু ছাগলে ভরে গেছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় পঞ্চগড় টুনিরহাট সড়কের পাশে ইজারাদার মোশারফ হোসেনের নিজস্ব জমিতেও হাটের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হয়েছে। হাটে হাজারো মানুষ। চলছে বেচাকেনা। বেশির ভাগ মানুষের মুখে নেই মাস্ক। তবে গলায় মাস্ক ঝুলানো আছে প্রায় সবার। স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা গাদাগাদি করে চলছে পশুর বেচাকেনা। গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতি টের পেয়েই ইজারাদারের দুএকজন কর্মীকে উচ্চস্বরে সবাইকে মাস্ক পড়ে নিতে বলতে দেখা যায়। কেউ কেউ ছবি না তোলার জন্যেও অনুরোধ করেন। কয়েকজন গরু ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ইজারাদারের লোকজন আগে থেকেই পশুর হাট চালুর বিষয়ে বিভিন্ন এলাকায় গোপনে প্রচারণা চালিয়েছে।
সদর উপজেলার বেলাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা শুনেছি যে বৃহস্পতিবার রাজনগর পশুর হাট চালু করা হবে। তাই আমার মত আমাদের অনেক ব্যবসায়ীও দূর-দূরান্ত থেকে গরু-ছাগল হাটে নিয়ে এসেছে। এখন বিক্রি না করেই আবার ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে। আমাদের গরু হাটে আনা-নেয়া বাবদ বাড়তি খরচ গুনতে হলো। এটা তো কেউ দেখলো না। আমরা বেকার হয়রানির শিকার হলাম।
সদর উপজেলার যতনপুকুরী থেকে পশু কিনতে আসা রহিমুল নামে এক ব্যাক্তি বলেন, শুনলাম কুরবানীকে কেন্দ্র করে পশুর হাট বসবে। তাই আমার কুরবানীর অংশীদের নিয়ে গরু কিনতে হাটে এসেছি। এখন দেখছি হাটও বসেছে কিন্তু প্রশাসনের লোকজন এসে হাটতো বন্ধ করে দিলো। আমরা কিভাবে কুরবানীর গরু কিনবো।
পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন সরকার বলেন, এত কঠোর অবস্থানের মধ্যে ইজারাদারেরা কোন শক্তির বলে পশুর হাট চালু করলো আমাদের মাথায় আসে না। যেখানে পঞ্চগড়ে দিন দিন করোনা পরিস্থিতি নাজুক হচ্ছে সেখানে সরকারি নির্দেশনা অমান্য পশুর হাট চালু করায় আমরা বিস্মিত। প্রশাসনকে বিষয়টি শক্তভাবে দেখা উচিত।
রাজনগর পশুর হাটের ইজারাদার মোশারফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও পঞ্চগড় পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুনের মৌখিক নির্দেশে আমরা পশুর হাটের কার্যক্রম শুরু করেছি। এখন প্রশাসন এসে হাটের কার্যক্রম বন্ধ করে দিলো। গত বছর আমাদের বড় লোকসান হয়েছে। এবার হাট চালু রাখতে না পারলে আরও লোকসান গুণতে হবে। আমাদেরকে লোকসানতো কেউ দেখলো না।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুন বলেন, আমরা কখনো তাদের পশুর হাট চালু করতে বলিনি। আমরা তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেছি। যখনই সরকারি নির্দেশনা আসবে তখনি যেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট চালু করতে পারে। তারা আমাদের কথা না শুনে হাট চালু করেছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, একটি গুজব ছড়িয়ে ইজারাদারেরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পশুর হাট বসিয়েছে। আমরা খবর পাওয়া মাত্রই হাটের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পশুর হাট চালু করায় ইজারাদারকে ১ লাখ ও তার সহযোগী দুই ব্যক্তিকে ৫০ হাজার করে এক লাখ সহ মোট ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
You cannot copy content of this page